খুলনা, বাংলাদেশ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ: তথ্য উপদেষ্টা
  বন্ধ হয়ে গেল নভোএয়ারের ফ্লাইট

আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে না পারা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা : নাহিদ (ভিডিও)

গেজেট ডেস্ক 

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে, এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। বিচার ও সংস্কারের জন্যই মানুষ রাস্তায় নেমেছিল।

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার (২ মে) বিকাল তিনটায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় দলটির এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, বিচার চলাকালীন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলেছিলাম; জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিলাম; কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে সেই জুলাই ঘোষণাপত্র এখনো আসছে না। ভুলে গেলে চলবে না- জুলাই গণভুত্থানের ফলেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করছে; যারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে; তারা কিন্তু এই শহিদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ফলেই স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবিলম্বে এ জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যে জুলাই সনদের কথা বলছি, যে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তন; শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথাটি থাকতে হবে।

এই এনসিপি নেতা আরও বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধানের কথা বলছি- সেই নতুন সংবিধানের জন্য আগামী নির্বাচন, আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন একত্রে করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহিদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নিতে হবে, রাষ্ট্র এবং সরকারকে এবং তাদের মানবিক মর্যাদার নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিবি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন বন্দোবস্ত বিনির্মাণে সংগঠিত হয়েছে। আমরা জানি আমাদের হাতে সময় অল্প কিন্তু আমাদের দায়িত্ব অনেক। সেই জাতি আমাদের ওপর ৫ আগস্ট আস্থা রেখেছিল- আমরা বিশ্বাস করি আগামীতে এনসিপির ওপরেই জনগণ তাকিয়ে আছে এবং সে আস্থা রাখছে। তাই আমরা দ্রুত সংঘঠিত হবো, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই একটি শৃঙ্খলিত দল হিসেবে জনগণের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাব। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব, প্রতিদিন দরজায় দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব। বন্ধুরা আপনারা প্রস্তুত হন- জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমরা আসছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য আপনারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, যদি এ সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না, জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বন্ধুরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু এবং প্রযুক্তির জন্য আমরা একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করব এবং একটি মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব। প্রিয় বন্ধুরা আমরা বলতে চাই এ ঢাকা বা বাংলাদেশ ছিল এই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের মিলনকেন্দ্র, বহু সংস্কৃতি, বহু সভ্যতার প্রাণ কেন্দ্র।

নাহিদ বলেন, আমরা সামাজিক মূল্যবোধ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বহু সংস্কৃতির ভিত্তিতে আমাদের নতুন সমাজ গঠন করব এবং ইনশাআল্লাহ ঢাকায় আগামী দিনে এই বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ এশিয়ার কান্ডারি হবে দক্ষিণ এশিয়াকে নেতৃত্ব দেবে।

সমাবেশে বক্তব্যে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেছেন, গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জাজনক। আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি।

আওয়ামী লীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না, তা জুলাই প্রজন্ম জানতে চায়- উল্লেখ করে তারিকুল আরও বলেন, অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা কোনো আমলাতন্ত্রিক জটিলতা দেখতে চান না। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচনে যেতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় করেছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে হবে। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার ছাড়া আবারও একটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেছেন, আমাদেহ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। দেশের মানুষকে তারা ভোট দিতে দেয়নি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য অবশ্যই দুর্নীতিপরায়ণ, খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দিল্লির ‘প্রেসক্রিপশনে’ বাংলাদেশ আর চলবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যূনতম টালবাহানা করবেন না। মৌলিক সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়।

দলের যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসীন রিয়াজ বলেন, আগামীর রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে ছুড়ে ফেলার রাজনীতি। যে সাংবাদিকেরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার রাজনীতি।

এনসিপির সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। এটাই হবে এই সরকারের অন্যতম সংস্কার।

দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে কি চলবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এনসিপির সংগঠক মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ ৫ আগস্টই দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই যোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে। সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না।

দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। সংস্কারের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

কয়েকটি দল এনসিপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, এনসিপির বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা শেষ হবে। এনসিপির একজন কর্মী জীবিত থাকতে বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসানও সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের বুকে ৭০টা গুলি করা হয়েছিল। একটা মানুষকে মারতে কত গুলি করতে হয়? হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো স্থান হবে না।

পৌনে পাঁচটার দিকে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঞ্চে আছেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। নেতাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!